আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম ব্যুরো।
কাতারের ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড দাওয়াহ সেন্টার ‘ফানার’-এ “ইসলামিক স্কলার এন্ড দায়ী” হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিভাবান আলেমে দ্বীন, হাফেজ মাওলানা মুফতি শাহেদ সুলতানী। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর গ্রামের আলোকিত ব্যক্তিত্ব মাওলানা মোহাম্মদ কাসেম সাহেবের সুযোগ্য সন্তান। তার এ মনোনয়নে ভূজপুরসহ সারাদেশের আলেম সমাজ এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।
মুফতি শাহেদ সুলতানী ২০১০ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষস্থানীয় দ্বীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম ধারার প্রতিভাবান ও মেধাবী। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, দাওরায়ে হাদিসের দশটি কিতাবের প্রতিটি হাদিস পাঠ শ্রবণ এবং মুখস্থ করার বিরল সম্মান — যা মাদ্রাসার পরিভাষায় ‘সনদে মুসালসাল’ বলে অভিহিত — তিনি অর্জন করেন। এই অর্জন যুগ যুগ ধরে হাটহাজারী মাদ্রাসার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
ঐ বছরই তার আমল, আখলাক ও উন্নত চরিত্র দেখে হাটহাজারী মাদ্রাসার তৎকালীন মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) তাকে খেলাফত প্রদান করেন। ছাত্রজীবনে সরাসরি খেলাফত প্রাপ্তির এমন ঘটনা বিরল এবং সম্মানজনক।
পড়াশোনা শেষ করে তিনি আরও দুই বছর করে মোট চার বছর ফতোয়া বিভাগ এবং উচ্চতর হাদিস বিভাগে অধ্যয়ন করে ‘মুফতি’ এবং ‘মুহাদ্দিস’ উপাধি লাভ করেন। অতঃপর তিনি এক বছর আন্তর্জাতিক তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি সফরে অংশগ্রহণ করে দ্বীন প্রচারে সময় দেন। পরে চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ ইফতা বিভাগ ‘দারুল ইফতা’-তে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তার ইলমি দক্ষতা এবং আলোকিত ব্যক্তিত্ব ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
পরবর্তীতে কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। লক্ষণীয় বিষয়, যেখানে অধিকাংশ ব্যক্তিকে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ ও বিভিন্ন পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে হয়, সেখানে মুফতি শাহেদ মাত্র এক বছরের মাথায় বিনা ইন্টারভিউতে সরাসরি খতিব পদে উন্নীত হন। আর এবার ‘ইসলামিক স্কলার ও দায়ী’ পদে তার নিযুক্তি কাতারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসেও এক বিরল ও অনন্য ঘটনা।
প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি, বিশেষ করে আলেম সমাজের মাঝে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। কাতারের মাটিতে দেশীয় সংস্কৃতি, ইসলামী দাওয়াত, সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রবাসীদের নৈতিক ও ধর্মীয় কল্যাণে তার অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি দ্বীনি পরামর্শ, ইলমি বয়ান এবং সমাজ গঠনমূলক কর্মসূচিতে ব্যাপক সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
উল্লেখ্য, তিনি এক ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা কাসেম সাহেব এবং দাদা আল্লামা সুলতান আহমদ (রহ.) ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের খ্যাতিমান ছাত্র। এমনকি তার নানা মাওলানা আব্দুল লতিফ সাহেব ছিলেন ইলম ও তাসাউফের স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব। এই বংশ পরম্পরায় দ্বীনের খেদমতে মুফতি শাহেদ সুলতানী হয়ে উঠেছেন এক উজ্জ্বল আলোকশিখা।
ভূজপুরের গর্ব, দেশের অহংকার মুফতি শাহেদ সুলতানী। বিদেশের মাটিতে দেশের সম্মান ও এলাকার নাম সমুন্নত করায় তিনি সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার এই অসাধারণ অর্জনে ভূজপুরবাসী, চট্টগ্রামের আলেম সমাজ এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ গর্বিত।
এ উপলক্ষে এলাকার ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সংগঠনসমূহ তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তার দীনি ও দাওয়াতি জীবনের আরও সাফল্য, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া করেছেন।