মো: জিহাদ হোসেন
বিশেষ প্রতিনিধি চাঁদপুর।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ রক্ষায় নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প প্রণয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৯ এপ্রিল সকালর উপজেলা সভাকক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ আয়োজনে নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের মতবিনিময় সভায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ এর সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি।
নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বাগানবাড়ী ইউনিয়নের হাপানিয়া, খাগুরিয়া ও নবীপুর এলাকার নদীর বাম তীরে কি. মি. ৫০০ মিটার হতে দেড় কি. মি. পর্যন্ত মোট ২ কি. মি. এবং ষাটনল ও সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের কালিপুর বাজার সংলগ্ন কি. মি. ৭.২ হতে ৭.৯ পর্যন্ত মোট ৭০০ মিটার এলাকায় তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোতে টেকসই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষা পাবে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ বক্তব্য বলেন, প্রকল্পের কারিগরি দিক ও সম্ভাব্য বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরে বলেন, আমরা মাটি পরীক্ষা, নদীর প্রবাহ বিশ্লেষণ ও স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় প্রকল্প নকশা তৈরি করছি। দ্রুত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে বলেন প্রকৌশলী সেলিম শাহেদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, ভাঙনের ফলে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষি উৎপাদনও নিরাপদ হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার বক্তব্যে বলেন, নদীভাঙন ঠেকাতে শুধু নদীতীর সংরক্ষণই নয়, পাশাপাশি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারও জরুরি। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্টসহ স্থানীয় অবকাঠামো ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব বিষয়কেও বিবেচনায় নিতে হবে।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মনজুর আমিন স্বপন বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। সরকার যদি প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন দেয়, তাহলে আমাদের এলাকার মানুষ বাঁচবে।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের রক্ষার জন্য আগে সমস্যগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যে যে সমস্যা গুলো সে সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হলে শুধু নদীভাঙন ঠেকানো নয়, বরং সেচ ব্যবস্থাপনার স্থায়িত্ব ও পানির সুষম বণ্টনও নিশ্চিত হবে।
অষ্টগ্রাম পানি ব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি শামসুজ্জামান বাবুল বলেন, আমাদের এলাকায় বিগত কয়েক বছর ধরে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কৃষিজমি, বসতবাড়ি এবং রাস্তাঘাট সবকিছু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনা দল হিসেবে আমরা মনে করি, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু ভাঙন রোধই নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশও রক্ষা পাবে। আমরা চাই, বাস্তবায়নে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম, মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারনণ সম্পাদক জাকির হোসেন বাদসা, সাংবাদিকরা সুমন আহমদ, মমিনুল ইসলাম, ইসমাইল খান টিটু, দীন ইসলাম প্রমুখ। সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ছাড়াও ভুক্তভোগী এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পের জরুরি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রস্তাব পাঠানো হবে।