▫️মহিউল ইসলাম, উপজেলা প্রতিনিধি(তালা,সাতক্ষীরা):
দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষে এখন থেকে দেশের বাজারে পাওয়া যাবে সাতক্ষীরার আম। আমের গুনগত মান বজায় রেখে নিরাপদে আম বাজারজাত করতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জেলা জুড়ে আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে গতকাল সোমবার (৫ মে) বেলা ১১ টার দিকে সদর উপজেলা ফিংড়ি ইউনিয়নের আম চাষী জনাব বিল্লাল হোসেনের আম বাগান থেকে আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তাক আহমেদ।
এ সময় বক্তব্য রাখেন , সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনির হোসেন, আম চাষি মোঃ বিল্লাল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ , কমলেশ সরকার।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন এনডিসি প্রণয় বিশ্বাস, উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা প্লাবণী সরকার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামন, সুমন কুমার সাহা, মো.আসাদুল ইসলাম, আইরিন সুলতানা,আম চাষি মাওলানা আব্দুল মোমিনসহ এলাকার অন্যান্য আম চাষি ও আম ব্যবসায়ীবৃন্দ।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন,
সাতক্ষীরার আম দেশের সব অঞ্চলের চেয়ে আগে বাজারে আসে এবং এই আমের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। সে কারণে সাতক্ষীরার আমের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও স্থান করে নিয়েছে। সাতক্ষীরা কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের অর্থনীতিতে এই জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মূলত ভৌগলিক অবস্থানগত ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরাতে গরম এবং মৌসুমি বায়ু অন্য সব জেলার আগে প্রবেশ করে। যে কারণে সাতক্ষীরার আম দ্রুত পেকে থাকে। এসময় তিনি আম কে জাতীয় ফল ঘোষণার দাবি করেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার আমই দেশের বাজারে সবচেয়ে আগে আসে’। এই কারণে এর চাহিদাও সবচেয়ে বেশি। এ জেলার আমের স্বাদ অতুলনীয়।
এ বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কোনোভাবেই যেন কেমিক্যাল বা ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করে আম পাকানো না হয়, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হিমসাগর ও আম্রপালি জাতের আমের চাহিদা রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সকাল থেকেই পাইকাররা আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।
আমের বাজার নিয়ে সাতক্ষীরা বড়বাজার পাকা ও কাঁচামাল ব্যবসায়ী কমিটির সেক্রেটারী রজব আলী বলেন, দেশ ও দেশের বাইরের বাজারে সাতক্ষীরার আমের একটি সুনাম রয়েছে। এই সুনামকে অক্ষুন্ন রাখতে আমরা সাতক্ষীরা বড়বাজার কমিটির পক্ষ থেকে কেমিক্যাল মুক্ত ও সৌলভ্য মূল্যে সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম বাজারজাত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সাথে সাথে আমাদের বড় বাজার থেকে আম সংগ্রহের আহ্বান জানাচ্ছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার আমবাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।যেখান থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে । যার মধ্যে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে আম বাজারে সংগ্রহের জন্য ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে, ৫ মে থেকে বাজারে থাকছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম। ২০ মে থেকে শুরু হবে হিমসাগর বাজারজাত। ২৭ মে থেকে পাওয়া যাবে ল্যাংড়া এবং ৫ জুন থেকে বাজারে উঠবে আম্রপালি আম।