চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে অবস্থিত ২৩৫ বছরের প্রাচীন কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রায় দুই বিঘা জমির উপর নির্মিত দ্বিতল এ মসজিদটি একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আধ্যাত্মিকতা ও স্থাপত্যশৈলীর অনন্য মেলবন্ধনে নির্মিত এ মসজিদটি ঘিরে প্রতিদিনই ভিড় জমে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের।
প্রাচীন এ মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী নজরকাড়া। প্রধান ফটকে রয়েছে একটি বিশাল গম্বুজ এবং চার কোনায় রয়েছে চারটি ছোট গম্বুজ। সীমানা প্রাচীরজুড়ে রয়েছে ৩০টি ক্ষুদ্র গম্বুজ ও লতাপাতার কারুকাজে খচিত পিলার, যা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রতিষ্ঠাকালে এটি নির্মিত হয়েছিল বাঁশ ও কাশফুলের ছন দিয়ে। পরবর্তীতে টিনের ছাউনি দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং সর্বশেষ ২০০৭ সালে এটি দ্বিতল আধুনিক স্থাপনায় রূপ নেয়।
এই মসজিদকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় আবহে মুখর থাকে এলাকা। বিশ্বমানের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ও ক্যান্সার সেন্টারের খাজা ইউনুস আলী ল্যাবরেট স্কুল এন্ড কলেজ, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় নিকটবর্তী হওয়ায় ছাত্র শিক্ষক ও রোগীর স্বজন ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শুক্রবারে এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন।
স্থানীয় প্রবীণ মুসল্লি হাজী সামান আলী জানান, “মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি, একসময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসতো, কারণ তখন গ্রামে গ্রামে মসজিদ ছিল না।” তিনি আরও বলেন, মুয়াজ্জিন হাজী বেলায়েত হোসেন দীর্ঘ ১৫ বছর বিনা পারিশ্রমিকে মসজিদের সেবা করেছেন এবং নিজ খরচে ২৫ ফুট উচ্চতার মিনার নির্মাণ করেন।
এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সবুর মোল্লা জানান, “কেজি মোড় থেকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে যাওয়ার পথে যে কারো নজর কাড়ে মসজিদটির সৌন্দর্য।” মসজিদের তিনটি সুউচ্চ মিনার ও মেহরাবে বিশাল আকৃতির গম্বুজ স্থাপত্যে জৌলুস যোগ করেছে।
ইমাম হাজী হাফেজ মোহাম্মদ আলী বলেন, “প্রায় আড়াই যুগ ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার এই মসজিদে কুরআন খতম ও প্রতি মঙ্গলবার কোরআন থেকে তাফসির করা হয়। এনায়েতপুরের স্থানীয় মুসল্লিদের সহযোগিতায় ১০-১৫ জন হাফেজ নিয়মিত তেলাওয়াতে অংশগ্রহণ করেন।”
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ মোঃ নুরুল হুদা জোদ্দার বলেন, “এটি শুধু এনায়েতপুরের নয়, বরং উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ।”
ঐতিহ্য, স্থাপত্য ও ধর্মীয় গুরুত্ব মিলিয়ে মসজিদটি আজও অগণিত মানুষের ধর্মীয় আবেগ ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।