মোঃ হাসান আলী, বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি (রাঙামাটি)
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বসেছে জমজমাট পশুর হাট। রাঙামাটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাজার ফান্ডের তত্ত্বাবধানে মডেল টাউনে বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ হাট।
উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও সীমান্তবর্তী সাজেক, দোসর, নিউলংকরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁটিয়ে আনা হয়েছে গরু। পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব গরুতে কোনো মোটা-তাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। ফলে গরুগুলো হৃষ্টপুষ্ট ও স্বাস্থ্যবান, যা সহজেই ক্রেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে।
বুধবার সাপ্তাহিক হাটে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। বড় গরুর দাম ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে। হাটে রয়েছে বিদেশি জাতের গরুও, তবে উচ্চ দামের কারণে এসব গরুর প্রতি আগ্রহ কম। বিভিন্ন সাইজের ছাগলও উঠেছে হাটে, বড় আকারের খাসি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়।
তবে এবার চট্টগ্রাম, ঢাকা ও অন্যান্য জেলার বড় ব্যবসায়ীরা হাটে না আসায় পশুর দাম কিছুটা কম। ফলে স্থানীয় খামারি ও বিক্রেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
হাটে প্রতিটি গরু বিক্রির আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। এতে ক্রেতারা নিশ্চিন্তে পশু কিনতে পারছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি জনাব মোঃ উমর আলী জানান, “বিগত স্বৈরশাসকের পতনের পর সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গরু কেনা-বেচা করতে পারছে। পূর্বে আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজির কারণে গরুর দাম বেশি ছিল তবে বর্তমানে কোন চাঁদাবাজি কিংবা হয়রানি না থাকায় গরুর দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। প্রতিবছর এ হাটে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হয়। এবারও বাজারের পরিবেশ, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক।”
বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে জানান, “আমি নিজেই কোরবানির হাট পরিদর্শন করেছি। এখন পর্যন্ত হাটে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
বাঘাইছড়ি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের তথ্য অনুযায়ী, হাটে তোলা গরুগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে; এতে কোনো প্রকার স্টেরয়েডজাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। এখন পর্যন্ত হাটে কোনো অসুস্থ পশু তোলা হয়নি। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম আগামী ৯ দিনব্যাপী চলমান থাকবে।
হাট ইজারাদার ইমরান হোসেন জুমান জানান, “পশুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি হলেও ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। তবু আশা করছি এবারও ১০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে।”
উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে হাটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা ভালো থাকায় গরুর দাম রয়েছে নাগালের মধ্যে। স্থানীয় মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।