মোঃফজলুল হক মানিক
জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট।
লালমনিরহাটে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের বাড়িতে আগুনে পুড়ে ছয়জন নিহতের ঘটনার ৯ মাস ২২ দিন সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৭৩ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে আসামি কারা হয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ।
সহযোদ্ধা পরিচয় দেওয়া শহরের নর্থ বেঙ্গল মোড় এলাকার বাসিন্দা আরমান আরিফ (২৭) নামের এক তরুণ এ হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলাটি করা হয়। এরপর রাতেই অভিযান চালিয়ে ছয়জন এজাহারভুক্ত আসামিকে শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লালমনিরহাট শহরের পূর্ব থানা পাড়ার বাসিন্দা ও পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হাসান ওরফে ভুট্টু (৪৮), রিফিউজি কলোনির বাসিন্দা পৌর আওয়ামী লীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সেলিম খান ওরফে বকুল (৫৬), বসুন্ধরা এলাকার শরীফ মোহাম্মদ আতাউল্লাহ (৫০), সদরের কাজীর চওড়া গ্রামের বাবুল (৩৫), ওয়ারলেস কলোনির মো. দোয়েল (৩৬) ও রিফিউজি কলোনির মো. জুয়েল মিয়া (৩৯)। প্রথম দুজন ছাড়া অন্য চারজন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শরীফ মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, জাহিদ হাসান ও বাবুলকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অন্য তিনজনকে আজ বুধবার আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি মিছিল সুমন খানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে আসামিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর এজাহারভুক্ত আসামিরা ছয়জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করেন। পরে বিকেল চারটার দিকে তাঁদের সুমন খানের বাড়ির ভেতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগিয়ে আসামিরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয়।
নিহত ছয়জন হলেন বসুন্ধরা এলাকার জোবায়ের হোসেন (১৭), সুরকিমিল এলাকার আল শাহরিয়ার রিয়াদ ওরফে তন্ময় (১৯), আদিতমারীর খাতাপাড়া গ্রামের শাহরিয়ার আল আফরোজ ওরফে শ্রাবণ (১৮), নবীনগরের জনি মিয়া (২০), কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির রাধিক হোসেন ওরফে রুশো (১৯) এবং বানভাসা এলাকার রাজিব উল করিম সরকার (১৮)।
মামলার বাদী আরমান আরিফ বলেন, “আমাদের সহযোদ্ধা ছয়জনকে পরিকল্পিতভাবে আটক করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এত দিনেও কোনো সঠিক তদন্ত হয়নি। আমি দায়বদ্ধতা থেকে এই মামলা করেছি। প্রকৃতপক্ষে ছাত্র সমন্বয়কারীদেরই মামলা করার কথা ছিল, কিন্তু তারা কেউ সে দায়িত্ব নেয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আশায় নিজেই মামলাটি করেছি।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরনবী ও পরিদর্শক (তদন্ত) বাদল কুমার মণ্ডল বলেন, মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে