বরিশাল ব্যুরো:
দিনের বেলা 'হেরিটেজ ক্রুজ' বা ঐতিহ্যবাহী নৌযান হিসেবে আবার যাত্রা শুরু করবে শতবর্ষ পুরনো প্যাডেল স্টিমার। অনেক বেশি পুরনো হওয়ায় এগুলো প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে না, চলবে সপ্তাহে এক দিন।
ঈদ-উল-আযহার পরপরই ৯৮ বছর পুরনো পিএস মাসুদ ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল রুটে যাত্রা শুরু করবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
স্টিমারসেবার যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৪ সালে। কয়লাচালিত প্যাডেল স্টিমার প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনার নৌপথে চলাচল করত।
পথে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, মোরেলগঞ্জ, হুলারহাট, সন্ন্যাসী, কাউখালী ঘাটে যাত্রাবিরতি দিয়ে খুলনায় ভিড়ত। ঔপনিবেশিক সময়ে খুলনার সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ শুরু হলে নৌপথে যাত্রী পরিবহন গুরুত্ব পায়।
স্টিমার ছিল একধরনের ভাসমান প্রাসাদ; যার চালনা শক্তি ছিল শুরুতে কয়লার আগুনে সৃষ্ট বাষ্পে, পরে ডিজেলে। এর বড় বৈশিষ্ট্য ছিল বিশালাকার প্যাডেল হুইল। কাঠের অভ্যন্তর, দোতলা কাঠামো, প্রশস্ত বারান্দা ও প্রথাগত আসবাব স্টিমারের যাত্রাকে করে তুলত স্মৃতিময়।
স্টিমারের যাত্রায় ছিল ধীরতা আর নীরবতা, লঞ্চের যাত্রায় থাকে যান্ত্রিক কোলাহল ও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদ। স্টিমার ছিল নিজেই এক গন্তব্য, যার যাত্রা মনে থাকত আজীবন। আর লঞ্চ শুধু গন্তব্যে পৌঁছায়, স্টিমারের মতো স্মৃতির ভার বহন করে না।
বরিশালবাসীর কাছে স্টিমার শুধু যান ছিল না, ছিল নির্ভরতার প্রতীক। ঝড়বৃষ্টি, জোয়ারভাটা পেরিয়েও এই স্টিমার আপন গন্তব্যে পৌঁছে দিত যাত্রীদের। ছিল নিরাপদ ও আরামদায়ক। শতবর্ষ ধরে সেবা দেওয়া স্টিমারগুলো পর্যটকদের কাছেও ছিল এক আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা।
বান্দরোডের কীর্তনখোলা পাড়ের পরিত্যক্ত স্টিমারঘাটে এখনো প্রতিদিন কেউ না কেউ এসে দাঁড়ায়—কেউ স্মৃতিকাতর হয়ে, কেউ পুরোনো দিনের আশায়। এখন সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।
বরিশাল বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহ সাজেদা বললেন, ‘স্টিমারে ভ্রমণের কত স্মৃতি আমাদের। বাতাসে ভেসে আসত স্টিমারের গগনবিদারী হুইসেল। মানুষ ছুটে যেত ঘাটে। সে এক অন্য রকম অনুভূতি।’
নদীবিধৌত জনপদ বরিশাল অঞ্চলের মানুষের যাত্রা একসময় স্টিমার ছাড়া কল্পনাও করা যেত না। সেই স্টিমার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। দেড় শ বছরের ঐতিহ্য যেন থেমে যায় নীরবে, অবহেলায়।
অবশেষে, স্বল্প পরিসরে হলেও চালু হচ্ছে স্টিমার সেবা।