চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সরকারের বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল বিতরণে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রকৃত উপকারভোগীদের এক বিশাল অংশ সরকারি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি ভিজিএফ কার্ডধারীকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এ নিয়ম মানা হয়নি। ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ২,৫৪০ জন উপকারভোগীর মধ্যে চাল পেয়েছেন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ জন। ফলে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র মানুষ ঈদের আগে সরকারি এই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হন।
বিকেল ৩টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্বল্প সংখ্যক মানুষ চালের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অনেকেই একাধিক কার্ড ব্যবহার করে একাধিকবার চাল সংগ্রহ করেছেন। অনুপস্থিত প্রকৃত কার্ডধারীদের পরিবর্তে অন্যরা টিপসই দিয়ে চাল নিয়েছেন। এমনকি এক কিশোরকে অন্যের নামে দুটি কার্ডে চাল তুলতে দেখা গেছে।
এক ভুক্তভোগী বৃদ্ধ বলেন, “আমি নিজের কার্ড হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছি, কিন্তু চাল পাইনি। অথচ আমার চোখের সামনেই কিছু লোকজন ট্রাক থেকে বস্তা বস্তা চাল নিয়ে গেছে।”
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, চাল বিতরণের কিছু সময় পরেই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশেই সরকারি চাল বিক্রি হতে দেখা যায়—যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সরকারি তহবিলের সরাসরি অপব্যবহার।
স্থানীয়দের ধারণা, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইউপি সদস্যদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে এই অনিয়ম ঘটেছে। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে পরিষদের প্রশাসকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় এক সচেতন নাগরিক বলেন, “সরকারি সহায়তা যদি গরিব মানুষের ঘরে না গিয়ে অসাধু চক্রের পকেটে যায়, তাহলে এ কার্যক্রমের নৈতিকতা ও উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।”
এলাকাবাসী অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, যারা প্রকৃত কার্ডধারী হয়েও চাল পাননি, তাদের মাঝে দ্রুত পুনরায় চাল বিতরণের দাবিও জানান।