সবুজ হাওলাদার
জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা
দক্ষিণাঞ্চলের শান্ত জেলা বরগুনা, আজ যেন পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে। প্রতিদিন ভোরবেলা সূর্যের আলোর ন্যায়, ভেসে আসে কান্না, আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লরছে। অনেকের জ্বর , শরীর ব্যাথা, সহ নানা উপসর্গ নিয়ে চলছে ডেঙ্গুর সাথে যুদ্ধের মোকাবিলা। এরপর প্লাটিলেট কমে যায়, নিঃশব্দে থেমে যায় হৃদকম্পন। বরগুনা এখন ডেঙ্গুর রেড জোন। ।
হাসপাতালে জায়গা নেই, বারান্দায় নেই হাটার যায়গা। সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দা যেন এখন ডেঙ্গুর ওয়ার্ডে পরিনত।ওষুধ নেই, স্যালাইন নেই, আল্লাহর ওপর ভরসা করে ফিরিয়ে আনা হয় রোগীকে!
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা মানবিকভাবে চেষ্টা করছেন। তবে জনবল, সরঞ্জাম, আইসিইউ ও অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতায় তারা চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেবা মিলছে না প্রত্যাশিতভাবে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অনেকেই উন্নত চিকিৎসার আশায় ছুটছেন বরিশাল বা ঢাকার দিকে। কিন্তু দূরবর্তী পথে যেতে যেতে অ্যাম্বুলেন্সেই অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। চিকিৎসার অভাবেই থেমে যাচ্ছে জীবন।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে কথা বললে সচেতন মহলের জাকির হোসেন মিরাজ, আবু জাফর সালেহ, মো. মুনির চৌধুরী, হোসনে আরা হাসি, অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন,সেনাবাহিনী যদি এই মুহূর্তে একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে, তাহলে হাজারো প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও ম্যান পাওয়ার, নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স, স্পিড বোট, হেলিকপ্টার ও ভ্রাম্যমাণ ইউনিট, জরুরি ওষুধ, স্যালাইন, প্লাটিলেট কিট, সংকট মোকাবেলায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী শৃঙ্খলা। এই ক্যাম্প কেবল চিকিৎসাসেবা নয়, বরগুনার জন্য হবে এক মানবিক আশ্বাস। ডেঙ্গু এখন যুদ্ধ! এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর মতো বাহিনীর সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।
ডেঙ্গুর থাবায় নিজের ছোট বোনকে হারিয়ে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. আসমা আক্তার বলেন, একটি শহর এখন ডুবছে অসুস্থতায় ও শোকে! ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই বছরের বাচ্চা রেখে মারা গেছেন আমার একমাত্র আদরের ছোট বোন মোনালিসা আক্তার জেরিন (৩২)।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত। ছোট বোন মারা যাওয়ার পরে সবাইকে নিয়ে আতঙ্কিত! যার স্বজন হারায় সেই জানে স্বজন হারানোর ব্যাথা। প্রতিটি পরিবারের কান্না যেন এখন একত্র হয়ে বলছে, ‘একবার আমাদের পাশে দাঁড়ান, আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো সারাজীবন।’
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। নতুন করে ডক্টর ও নার্স পেয়েছি হাসপাতালে। কিন্তু তবুও হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলবে। আমাদের এই ক্লান্তি লগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি মেডিকেল ক্যাম্প করে সেবা দিতে এগিয়ে আসে। তাহলে আমরা তাদের সাদরে গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনায় নতুন করে ৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০৬ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১৫ জন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক হাজার ৮৩৮ জন। তবে এছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতালে বা বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছে কয়েক শতাধিক মানুষ।
তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ নিয়ে চলতি বছরে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জন। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে মারা গেছেন পাঁচজন এবং অন্যান্য হাসপাতালে ছয়জন।