ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি, মোঃ রুবেল মিয়া
ময়মনসিংহ, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (আমার দেশ): সম্প্রতি 'শতকোটির সরকারি জমি সাড়ে পাঁচ লাখে বিক্রি' শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি প্রকাশিত প্রতিবেদনটির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এর পেছনের রহস্য উন্মোচন করেছেন। এই প্রতিবেদনটি তার বক্তব্য ও নথিপত্রের আলোকে সাজানো হয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে জেলা প্রশাসনের বিচক্ষণতা, দক্ষতা এবং দ্রুত পদক্ষেপের অনবদ্য চিত্র।
মিথ্যা তথ্যের জাল উন্মোচন
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে ওই প্রতিবেদনের কয়েকটি তথ্যের ভুল দিক তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে:
১. জমির মূল্যের বিভ্রান্তি: প্রতিবেদনে জমির মূল্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা উল্লেখ করা হলেও, এটি ছিল মূলত আদালত কর্তৃক নির্ধারিত মৌজা রেটে জমির দলিল সম্পাদনের মূল্য।
২. আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে বিভ্রান্তি: জেলা প্রশাসক বলেন, এই ঘটনায় সময় মতো আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
৩. গাফিলতির মিথ্যা অভিযোগ: জেলা প্রশাসকের রহস্যময় নীরবতা বা গাফিলতির অভিযোগকেও তিনি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেন।
৪. নোটিশ প্রাপ্তির অসত্যতা: শাঁখারী পট্টি বিদ্যালয়ে নোটিশ না পাওয়ার অভিযোগটিও তিনি নাকচ করে দেন।
নথিপত্রই সাক্ষ্য দেয় বীরত্বের
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত জমিটি মানসিংহ টাউন মৌজার। বিআরএস ১/১ খতিয়ানের ১৫৬৮৫ নম্বর দাগের ০.৮৪৬০ একর এই মূল্যবান জমিটি জেলা প্রশাসকের নামে লিপিবদ্ধ। একজন ভূমিদস্যু এই জমি দখলের জন্য আদালতে মামলা করলে, জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেন এবং বিজ্ঞ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
কিন্তু চক্রটি থেমে থাকেনি। তারা নিজেদের মধ্যে ভুয়া দাতা-গ্রহীতা সাজিয়ে একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করে। আদালত মৌজা রেটে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যে দলিল সম্পাদন করে দিলেও, জেলা প্রশাসক একজন অন্তর্যামী নন যে পূর্বাহ্নেই সবকিছু জেনে যাবেন। তবে খবরটি জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন বিচক্ষণ প্রশাসকের মতো তড়িৎ গতিতে কাজ শুরু করেন।
দক্ষতা ও বিচক্ষণতার অনন্য দৃষ্টান্ত
দলিল সম্পাদনের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দ্রুত তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে দলিলটি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। কালবিলম্ব না করে জাল দলিল বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়, একটি সানি মোকদ্দমা দায়ের করা হয় এবং দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হলে তারা তদন্ত করে এবং জেলা প্রশাসকের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, জালিয়াত চক্রকে আইনের আওতায় আনতে ভূমি অপরাধ প্রতিকার আইনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
শাঁখারী পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক জানান, এটি অর্পিত সম্পত্তি এবং আদালতে এর আইনি লড়াই সরকার পক্ষের অনুকূলেই ছিল। মামলার রায় সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে, যা আদালতের এখতিয়ার। তবে এই মামলার বিরুদ্ধেও আপিল করা হয়েছে এবং মহামান্য হাইকোর্টে রিট হয়েছে, যা প্রমাণ করে জেলা প্রশাসক তার দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র গাফিলতি করেননি।
জনগণের প্রতি বার্তা: হলুদ সাংবাদিকতায় বিভ্রান্ত হবেন না
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, কোনো সংবাদ প্রকাশিত হলে তা যাচাই-বাছাই করে, সত্যতা নিরূপণ করে বিশ্বাস করতে। তিনি হলুদ সাংবাদিকতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তার এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, জেলা প্রশাসক শুধু একজন দক্ষ প্রশাসক নন, তিনি একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকও, যিনি সর্বদা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট। এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে, সরকারি জমি রক্ষায় এবং ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান অতুলনীয়।