চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি।
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুর কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ প্রায় ২৩৫ বছর ধরে ইসলামি ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে টিকে রয়েছে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্যোগে প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই মসজিদটি আজও হাজার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের অন্যতম কেন্দ্রস্থল।
দ্বিতল বিশিষ্ট এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। রয়েছে সুসজ্জিত অজুখানা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর কারণে মসজিদটি দেখতে এবং নামাজ আদায়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা সমাগম করেন।
বিশেষ করে পাশেই অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ও ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসার জন্য আসা দেশ-বিদেশের রোগী ও স্বজনরা এই মসজিদে জুমাসহ নিয়মিত নামাজ পড়েন। রমজান মাসে মহল্লাবাসীর উদ্যোগে ইফতার ও ইতিকাফকারীদের জন্য প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
মসজিদের মুসল্লি হাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন কবিরাজ জানান, প্রধান ফটকে একটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। সীমানাপ্রাচীরজুড়ে ৩০টি ছোট গম্বুজ ও পিলারের লতাপাতা খচিত কারুকাজ মসজিদটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রথমদিকে কাশফুলের ছন ও বাঁশ দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে টিনশেডে রূপান্তর এবং ২০০৭ সালে এটি পাকা দ্বিতল ভবন হিসেবে নির্মিত হয়। বর্তমানে মসজিদটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন।
প্রবীণ মুসল্লি হাজী সামান আলী বলেন, “মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি, একসময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে নামাজ পড়তে আসতেন। তখন আশপাশে এত মসজিদ ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, মসজিদের সুউচ্চ মিনার থেকে প্রখ্যাত মুয়াজ্জিন মরহুম বেলায়েত হোসেন আজান দিতেন, যার ধ্বনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত। তিনি দেড় যুগ বিনা পারিশ্রমিকে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং নিজ অর্থে ২৫ ফুট উচ্চতার একটি মিনার নির্মাণ করেন।
এলাকার চিত্রশিল্পী মোশারফ হোসেন খান জানান, কেজি মোড় থেকে মেডিকেল কলেজে যাতায়াতকারীদের দৃষ্টি কাড়ে মসজিদের সুউচ্চ তিনটি মিনার এবং বিশাল গম্বুজ। এটি শুধু উপাসনালয় নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
মসজিদের পশ্চিম-উত্তরে রয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফি সাধক খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর মাজার, যেখানে দেশি-বিদেশি জাকেররা নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগি করতে আসেন।
মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আলী জানান, গত আড়াই যুগ ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে পবিত্র কুরআন খতমের আয়োজন চলে আসছে। গ্রামের সর্বস্তরের মুসল্লির সহযোগিতায় ১০-১৫ জন হাফেজ কুরআন তেলাওয়াত করেন। ধর্মীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল হুদা জোদ্দার বলেন, “এনায়েতপুর বড় জামে মসজিদ শুধু চৌহালীর গর্ব নয়, বরং উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন জামে মসজিদ। বর্তমানে এটি আরও দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই করতে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”
ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধারক এনায়েতপুর কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ আজও আধ্যাত্মিকতার বাতিঘর হয়ে পথ দেখাচ্ছে আগত প্রজন্মকে।