বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি:
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু চক্র পতিত আওয়ামী প্রশাসন ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দাপটের সঙ্গে দখল ও প্রতারণার রাজত্ব কায়েম করেছে।
মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে মৃত ননী গোপাল দে’র চার পুত্র—ঝনু কান্তি দে, রুনু কান্তি দে, জিল্লু কান্তি দে ও নিলু কান্তি দে’র নাম। এরা এলাকায় ভূমিদস্যু পরিবার হিসেবে পরিচিত। তারা জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তির জমি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করেছে, যা বিস্ময়কর এবং সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ।
মৃত ব্যক্তির নামে জমির রেজিস্ট্রি!
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জীবদ্দশায় মৃত ননী গোপাল দে কোনো জমি রেখে যাননি। অথচ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই পরিবারের ভাগ্য বদলে যায়। দ্রুতই তারা জমি-জমা নিয়ে প্রতারণার পথে পা বাড়ায়।
তাদের চাচা মৃত বাবলা কান্তি দে, যিনি রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, তার প্রভাব খাটিয়ে চার ভাইকে জাল দলিল, ভূয়া মালিকানা ও কোর্ট শুনানিতে ভুয়া সাক্ষ্য জোগাড়ে সহায়তা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এক ঘটনার উদাহরণ— ২০১৩ সালে মারিশ্যা মৌজার দাগ নম্বর ২৭০১, ৭০৪৬ ও ২৭৪৭, খতিয়ান নম্বর ৪৮৭, হোল্ডিং নম্বর ৩৪০ ও ১২৪৯-এর আওতায় ২৬ শতক জমি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয় তারা। অথচ এই জমির প্রকৃত মালিক সুরেশ চন্দ্র চাকমা ১৯৭৯ সালেই মৃত্যুবরণ করেন, যা তার আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষ্যে নিশ্চিত হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে জমি দখলের চিত্র
এই একটি ঘটনা নয়—তথ্য ঘাটলে আরও ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে। তাদের নামে রেজিস্ট্রিকৃত জমিগুলোর কিছু নমুনা:
২০১৫ সালে: দাগ ২৭৫০, খতিয়ান ৭, হোল্ডিং ৩১১(ক) – ২২ শতক।
২০১৬ সালে: দাগ ২৭৪৮, খতিয়ান ৭, হোল্ডিং ৩১১(ক) – ৩৫ শতক।
২০২০ সালে: দাগ ২৬৯৮, খতিয়ান ৪২২, হোল্ডিং ৩০৮(ক) – ৮ শতক।
কখনো জাল দলিল, কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য, কখনো প্রশাসনিক প্রভাব—এভাবেই একের পর এক জমি দখল করে নিচ্ছে এই পরিবার।
“পিয়নের নামে কোটি টাকার সম্পত্তি! এটা কি সম্ভব?”
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য এসেছে এই পরিবারের অন্যতম সদস্য জিল্লু কান্তি দে সম্পর্কে, যিনি পেশায় একজন পিয়ন। তিনি বাঘাইছড়ির কাচালং সরকারি ডিগ্রি কলেজে কর্মরত পিয়ন হলেও তার নামে এবং স্ত্রীর নামে যে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তা অবাক করে দেয় সবাইকে।
বিস্ময়কর সম্পত্তির খতিয়ান:
বিজিবি চেকপোস্টের কাছে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা ফাউন্ডেশনভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন এক তলা ভবন।
ঐ বাড়ির পাশেই নিজের নামে ২টি এবং স্ত্রীর নামে ৩টি পৃথক দাগে জমি।
খাগড়াছড়ি জেলায় স্ত্রীর নামে মূল্যবান জমি।
মোট স্থাবর সম্পদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা!
প্রশ্ন জাগে—একজন পিয়নের আয় যেখানে মাসে সর্বোচ্চ ১৫-২০ হাজার টাকা, তিনি কীভাবে এই বিপুল সম্পদের মালিক হলেন?
“দুদক ও প্রশাসন কি অন্ধ?” — জনসাধারণের প্রশ্ন
তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং ক্ষমতার অপব্যবহারেই এই সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কি এসব জানে না? নাকি জানলেও চুপ থাকে?